কবিতা কোনো সিঁড়ি নয়, লিফ্টও নয় অটোমেটিক, চড়ে উঠে গেলেই হলো দশ-পনের তলার উঁচুতে, আকাশঘরে।
আর তারও ঊর্ধ্বে শততল উঁচুতায়। কবির জন্য আছে পথ বন্ধুর অমসৃণ, দীর্ঘ-দীর্ঘতর। তারও পরে দূরে, বহুদূরে
নির্জনতা অথচ প্রচণ্ড উচ্চকিত খ্যাতি-মোহময় এক পৃথিবী, যেখানে সৃষ্টি, সৃষ্টিপ্রেমিক সুন্দরতর রূপ কবিকে কেবলই
ডাকে নিশি পাওয়া কুহকের মতো দু'বাহু বাড়িয়ে- 'এসো এসো আমার দুয়ারে; বৈরাগ্যে-বৈভবে, ছন্দ রূপ রস
রঙ বৈচিত্র্যের গৈরিক মাটির নোনাস্বাদে।'
কবির জন্য এ এক ধারাবাহিক তীর্থযাত্রা। এ যাত্রায় কবি সুমন সরদার নিঃসঙ্গ। কখনও কখনও একাকী যোদ্ধা, নিজেরই
ছায়ার প্রতিপক্ষে। কাজেই কবিতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আবেগ উপেক্ষায় সুমন মৌন। আবার একইভাবে পরিপূর্ণ। কাজেই
সুমন সরদারের পক্ষে দেখা সম্ভব, তাঁরই চারপাশ। আর তখন কবি সুমন সরদার অতি তীক্ষ্ন চোখ তুলে (কবিতার
অভিজ্ঞতায়, বয়সে নয়) দেখেন-
"এ রকম কিছু কিছু বৃদ্ধ ভাবনার জন্ম হয়
বৃষ্টিস্নাত দিনের জন্যেই
অথচ সুনীল আকাশের সীমাহীন মেঘচোখ
আমার কষ্টের ভার বয়ে যায়...
(মেঘচোখ)
সুমন লিখছেন নিজস্ব দৃষ্টিতে ছুঁয়ে আজকের সমাজ, মানুষ এবং সংস্কৃতির মাত্রাকে চিনে বুঝে। একজন কবি যখন
রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন এবং গড়ে নিতে চান সমাজদর্শনের আলাদা এক রূপকাঠামো, তখন কবি নিজেকে
সমাজের ছিন্ন রিক্ত দুঃখী সত্ত্বায় খুঁজে পান আশ্চর্য এক চরম অথচ ভীষণ বিনম্র চেতনায়। আর তখন
(কবিতা বিষয়ক ছোটকাগজ 'উত্তরপুরুষ'-এর প্রথম সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০০১ এ প্রকাশিত)
* মিলিকুন (প্রয়াত) আশির দশকের গল্পকার ও ঔপন্যাসিক; সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষিকা, প্রেসিডেন্সি স্কুল, ঢাকা।
|